বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের দেশের সারিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অসম প্রতিযোগিতা হ্রাস করে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রয়োজন। প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সাধারণ মানুষের পণ্য ও সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং পণ্যে সর্বোচ্চ উপযোগ পাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনে উদ্ভাবন (Innovation) আনয়নের জন্য বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা অপরিহার্য। প্রতিযোগিতা কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনীতিতে টেকসই প্রতিযোগিতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাজারে সমতা আনয়ন, ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষা এবং বাজারে Best Practice নিশ্চিতকরণ।
বাংলাদেশে ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন প্রণয়ন করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ (Collusion) নিয়ন্ত্রণ, কর্তৃত্বময় অবস্থানের (Dominant Position) অপব্যবহারে রোধ, জোটবদ্ধতা (Acquisition, Merger) যা দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করে, এ সকল কর্মকাণ্ডকে নির্মূল করার জন্য প্রতিযোগিতা আইন তৈরী করা হয়েছে। আইনটিতে মোট ৪৬টি ধারা রয়েছে।
এই আইনটি প্রণয়নের পূর্বে বাংলাদেশে Monopolies and Restrictive Trade Practices (Control and Prevention) Ordinance, 1970 বলবৎ ছিল। প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর মাধ্যমে উক্ত আইনটি রহিত করা হয়েছে।
প্রতিযোগিতা আইনের উদ্দেশ্যসমূহ অর্জন করার নিমিত্ত প্রতিযোগিতা আইনের ৫ ধারা মোতাবেক সরকার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করেছে। আইনের ৭ ধারা মোতাবেক ০১ জন চেয়ারপার্সন এবং ০৪ জন সদস্য সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হবে।
একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বাজার সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতনকরণ, সম্পৃক্তকরণ ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তোলা।
(ক) বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তারকারী অনুশীলনসমূহকে নির্মূল করা, প্রতিযোগিকে উৎসাহিত করা ও বজায় রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করা;
(খ) কোন অভিযোগের ভত্তিতিে অথবা স্ব-প্রণোদিতভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিযোগিতা বিরোধী সকল চুক্তি কর্তৃত্বময় অবস্থান এবং অনুশীলনের তদন্ত করা;
(গ) প্রতিযোগিতা আইনের অধীনে অপরাধের তদন্ত পরিচালনা এবং উহার ভিত্তিতে মামলা দায়ের ও পরিচালনা করা;
(ঘ) জোটবদ্ধতা এবং জোটবদ্ধতা সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি জোটবদ্ধতার জন্য তদন্ত সম্পাদনসহ জোটবদ্ধতার শর্তাদি এবং জোটবদ্ধতা অনুমোদন বা নামঞ্জুর সংক্রান্ত বিসয়াদি নির্ধারণ করা;
(ঙ) প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত বিধিমালা, নীতিমালা, দিক নির্দেশনামূলক পরিপত্র বা প্রশাসনিক নির্দেশনা প্রণয়ন এবং উহা বাস্তবায়নের সরকারকে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা;
(চ) প্রতিযোগিতামূলক কর্মকান্ডের উন্নয়ন এবং প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য উপযুক্ত মানদন্ড নির্ধারণ করা;
(ছ) সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনের মধ্যে প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত সার্বিক বিষয়ে প্রচার এবং প্রকাশনার মাধ্যমে ও অন্যান্য উপায়ে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ করা;
(জ) সরকার কর্তৃক প্রেরিত প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত যে কোন বিসয় প্রতিপালন, অনুসরণ বা বিবেচনা করা;
(ঝ) ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তাবায়নের বিষয়ে অন্য কোন আইনের অধীন গৃহীত ব্যবস্থাদি পর্যালোচনা করা।